বদহজম থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায়

 আমাদের সকলেরই কমবেশি বদহজম হয়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম বা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের পেট ফেঁপে যায়। এর ফলে শুরু হয় বদ হজম।

বদহজম-থেকে-মুক্তির-উপায়

বদহজম হলে কখনো পেটের ব্যথাও করে। আবার অনেক সময় পাতলা পায়খানাও হয়। হজমের সমস্যা হলে পেটে অনেক গ্যাসের সৃষ্টি হয় আর এই গ্যাসের ফলেই বদহজমের সৃষ্টি হয়।

পোস্ট সূচীপত্র: বদহজম থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায়

বদহজম থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায়

বদহজম হলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বেশিরভাগ মানুষেরই বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া করা হয় তখনই বদহজমের সমস্যা হয়। আবার এমন অনেকে আছে যারা একটার পর একটা খেতে থাকে তাদেরও বদহজম হয়।
অনেকের খাবার হজম না হলে পেট মোচড় দেয়, পেট ব্যাথা,অস্বস্তি ভাব দেখা দেয়। যদি এমন সমস্যা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে বদহজমের সমস্যা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বমিও করে ফেলেন। যাদের বদহজমের সমস্যা হয় তারা ভয়ে আর কোন খাবার খেতে চান না। তবে এমনটা করবেন না এতে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি বদ হজম হয় তাহলে বদ হজম থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায় রয়েছে। বদহজম থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হাঁটাহাঁটি করতে হবেঃ আপনার যদি বদ হজমের সমস্যা হয় তাহলে সারাক্ষণ শুয়ে বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি করুন এতে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। বেশি শুয়ে বসে থাকলে পেটে অস্বস্তি বাড়বে তাই শুয়ে বসে না থেকে আপনাকে বেশি বেশি হাঁটতে হবে।
বেশি করে পানি পান করতে হবেঃ পানি হল একটি আদর্শ খাবার আপনার যদি বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আপনি যে খাবারই খান না কেন বেশি করে পানি পান করবেন কেননা পানি খাবার কে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
আদা খানঃ বদহজমে সমস্যা হলে আদা খেতে হবে আদা খেলে পেট হালকা হয় বদহজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়। আপনি আদা সরাসরি লবণ দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। যদি সরাসরি আদা খেতে না পারেন তাহলে আদাকে কুচি কুচি করে কেটে লবণ দিয়ে খেতে পারেন। যদি তাতেও সমস্যা হয় তাহলে চায়ের মধ্যে আদা দিয়ে আপনি খেতে পারেন।
বেশি করে শসা খানঃ শসা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি যেমন পানির অভাব পূরণ করে তেমনি হজমেও সাহায্য করে। শসা খেলে পেট ঠান্ডা থাকে তাই আপনার যদি বদহজম হয়ে থাকে তাহলে আপনি বেশি করে শসা খান দেখবেন উপকার পাবেন। এছাড়া শসা গ্যাস কমাতে অনেক সাহায্য করে।
বেশি করে পেঁপে খেতে হবেঃ পেপে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যাদের অতিরিক্ত গ্যাস আছে তারা পেঁপে খেতে পারেন। পেপে তে পাপাইয়া নামক এনজাইম রয়েছে যা হজম করতে সাহায্য করে। বদহজমের সমস্যায় বেশি করে পেপে খেতে হবে।
টক দই খেতে হবেঃ বেশি করে টক দই খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। যাদের বদহজমে সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন যে কোন ফলের সাথে টক দই মিশ্রিত করে যদি খান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি বদহজমের সমস্যা চলে যাবে। টক দই আমাদের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
কাঁচা হলুদ খেতে হবেঃ দ্রুত পেট ফাঁপা সমস্যায় কাঁচা হলুদের বিকল্প নাই। আপনার যদি পেট ফাঁপা বা বদ হজমের সমস্যা হয় তাহলে কাঁচা হলুদ পানির সাথে মিশ্রিত করে চা বানিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
জিরা পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেনঃ আপনি যদি সরাসরি জিরা খেতে না পারেন তাহলে এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ জিরা নিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে দ্রুত উপকার পাবেন। জিরা পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়।
ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুনঃ ডাবের পানিতে প্রচুর উপকার রয়েছে। এটি আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দূর করে। যাদের মূলত জন্ডিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশি ডাবের পানি খেতে বলা হয়। তবে আপনার যদি বদ হজমের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে প্রতিদিন একটি অথবা দুইটি করে ডাব খাওয়ার অভ্যাস করুন।
কলা খানঃ কলা খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। কলাতে ভিটামিন বি সিক্স রয়েছে। আবার কলা-কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে তাই আপনার যদি বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত দুইটি করে কলা খান এতে আপনি উপকার পাবেন।

বদহজমের লক্ষন

বদহজম হলে পেটে ব্যথা করে পেট জ্বালা করে অস্বস্তি ভাব শুরু হয়। সাধারণত খাওয়া দাওয়ার অভ্যাসের কারণে বা বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার কারণে বদ হজম হয়ে থাকে। বদহজমের সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। বদহজমের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। চলুন কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
বুক জ্বালাপোড়া করবেঃ বদহজমের প্রথম লক্ষণই হচ্ছে আপনার বুক সবসময় জ্বালাপোড়া করবে কিন্তু আপনি যখন খাবার খাবেন তখন বুক জ্বালাপোড়া অতিরিক্ত বেড়ে যাবে।
পেট ফুলে থাকাঃ আপনি যদি অনুভব করেন যে আপনার পেট সবসময় ফুলে আছে তাহলে আপনি বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন।
বমি ভাব হওয়াঃ আপনার যদি সব সময় বমি বমি ভাব লাগে তাহলে বুঝতে হবে আপনি বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন।
ঢেকুর তোলাঃ আপনার যদি সব সময় ঢেকুর উঠে তাহলে আপনি অবশ্যই বদদোজনের সমস্যায় ভুগছেন।

বদহজম কেন হয়

সাধারণত নানা কারণে বদহজম হয়ে থাকে। আপনার পাকস্থলীতে এক ধরনের এসিড রয়েছে এই এসিড যদি কোন কারণে পেরে যায় তখন জ্বালাপোড়া শুরু হয় আর এখান থেকে বদহজমের সমস্যা শুরু হয়। অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া দাওয়ার কারণে বদ হজম হয়ে থাকে। আপনার যদি সব সময় বাহিরের ভাজাপোড়া খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে নিশ্চিত বদহজম হবে।
আবার আপনি যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খান অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খান তাহলে বদহজম হবে। খাবার খাওয়ার সময় যদি আপনি ভর পেট খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই কখনো ভর পেট খাবেন না। সময় পেট একটু খালি রাখবেন।
সাধারণত কোথাও বেড়াতে গেলে, বিয়ের দাওয়াতে গেলে আমরা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বদহজম সৃষ্টি হয়। সবসময় চেষ্টা করবেন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে খাওয়ার।
আবার ধূমপানের অভ্যাসও আপনার বদহজমের সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেক সময় কোন কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও বদহজম হয়।
আপনার যদি অ্যালকোহল সেবন করার অভ্যেস থেকে থাকে তাহলে আজই এই অভ্যাস বাদ দিন কেননা অ্যালকোহল আপনার এক সময় প্রচুর বদহজম বাড়িয়ে দিবে যা কখনোই ছাড়তে চাইবে না। এক কথায় সময় থাকতেই সচেতন হন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে অনেকেরই পাকস্থলীতে ক্যান্সার থাকে। ক্যান্সার থাকলে বদহজমের সমস্যা হবে। যদি কারো পাকস্থলীতে আলসার থেকে থাকে তাও বদ হজম হবে।

ঈদের সময় বদহজম থেকে বাচার উপায়

ঈদ মানে আনন্দ। সেই সাথে ঘরে মুখরচোক খাবারের সমাহার। তবে আপনি যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে খেয়ে যান তাহলে আপনার ঈদ মাটি হয়ে যাবে। তাই ঈদের সময় অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। ঈদের সময় বদহজম থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
প্রচুর পানি পান করতে হবেঃ খাবার যতটুকুই খান না কেন সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে কমপক্ষে আপনাকে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করতেই হবে।
হাটাহাটি করতে হবেঃ আপনি যদি কোন ভাবে একটু বেশি খেয়ে ফেলেন তবে শুয়ে বসে থাকবেন না বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসুন। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটুন এতে আপনার খাওয়ার হজম হয়ে যাবে।
আশ যুক্ত খাবার খেতে হবেঃ ঈদে যা ইচ্ছা তাই খাবেন না অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবার খাবেন খেয়াল রাখতে হবে যেন কোষ্ঠ কাঠিন্য না হয়। আজযুক্ত খাবার খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হবেনা।
ঘন ঘন খেতে হবেঃ ঈদের সময় বলে একেবারে ভরপেট খাবেন না। অল্প অল্প করে ঘন ঘন খেতে হবে তাহলে বদহজম হবে না।
কোমল পানীয় বাদ দিতে হবেঃ কোমল পানিও খেলে আপনার বদহজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব কোমল পানিও বাদ দিবেন।
অতিরিক্ত কফি বাদ দিতে হবেঃ কফি খাওয়া ভালো কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে বদহজম হবে। তাই অতিরিক্ত কফি খাওয়া বাদ দিতে হবে। এছাড়া কফি শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করে।
মিষ্টি অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনাঃ আপনি যদি বদহজম থেকে বাঁচতে চান তাহলে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবেন না। সর্বোচ্চ এক থেকে দুইটি মিষ্টি ঠিক আছে কিন্তু এর বেশি খাওয়া যাবে না।
খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেনঃ অনেকেই আছেন খাবার মুখে দিয়ে গিলে ফেলেন এমনটা করা যাবে না এতে বদহজম হবে। আপনি যদি বদহজম থেকে বাঁচতে চান তাহলে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
বদহজম-থেকে-মুক্তির-উপায়

বদহজম দূর করার ঘরোয়া উপায়

অতিরিক্ত তৈলাক্ত ঝাল মসলা খাওয়ার ফলে বদ হজমের মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে রোজার সময় না খেয়ে থাকা হয়। দীর্ঘ একমাস পর যখন ঈদে বেশি খাওয়া হয় তখনই বদ হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর প্রধান কারণ হলো ইফতারিতে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া থাকে। এছাড়া মানসিক চাপ,পাকস্থলীতে আলসার থাইরয়েডের সমস্যা,মদ পান এগুলোর কারণেও বদ হজমের সমস্যা হয়ে থাকে।
বদহজমের সমস্যা হলে গলা ঝালাপোড়া করে, পেট ব্যথা করে, সব সময় ঢেকুর উঠে। যদি এইরকম হতে থাকে তাহলে একটু পর পর অল্প করে পানি পান করুন। পানি পান করলে আপনি কিছুটা আরাম পাবেন। লে এ ছাড়া বদহজমের সমস্যা দূর করার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
গ্রিন টিঃ গ্রিন টি বা ভেষজ চা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যেকোনো ভারি খাবার খাওয়ার পরে একটা গ্রিন টি পান করুন। এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। গ্রিন টিয়ে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্রিন টি পাওয়া যায় আপনি আপনার পছন্দ মত একটি গ্রিন টি এর প্যাকেট কিনবেন।
আদাঃ আদা পেটের যেকোনো সমস্যার জন্য অনেক উপকারী। কেউ যদি নিয়মিত আদা খায় তাহলে তার গ্যাস, বদ হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা এগুলো থাকবে না। বদহজমে সমস্যার ক্ষেত্রে আপনি আদা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। যদি সরাসরি খেতে সমস্যা হয় তাহলে আদা ছেচে রস করে খেতে পারেন। এছাড়া আপনি আদা কুচি কুচি করে কেটে লবন দিয়ে খেতে পারেন। আপনার যদি মন চায় তাহলে আপনি লাল চায়ের সাথে আদা মিশিয়ে খেতে পারেন।
বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা পেটের ব্যথা কমায়। সাধারণত পেটে এসিডিটির কারণে বদহজম সৃষ্টি হয় এসিডিটি কমাতে বেকিং সোডার বিকল্প নাই। পেটের গ্যাস এবং বধ হজম থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত বেকিং সোডা খান।
আপেল সিডার ভিনেগারঃ বদহজমের সমস্যা দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার খান। আপেল সিডার ভিনেগার হজম প্রক্রিয়াকে সচল করতে সাহায্য করে। এক কাপ পানিতে এক চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খেলে অতি দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

বদহজম হলে যেসব খাবার খাবেন

খাবারের অনিয়ম বা অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের ফলে বদ হজম হয়। যার ফলে পেট ফুলে যায়, পেটে গ্যাস হয়, ঢেকুর উঠে। অনেকেই আছেন যাদের হজম শক্তি অনেক দুর্বল। তারা কি খাবেন? প্রথমে আগে বুঝতে হবে আপনার কোন কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে। সেগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। কারো কারো দুধ জাতীয় খাবার খেলে বদহজম হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে শাঁক খেলে পেটের সমস্যা বাড়ে। আবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনি যদি নিয়মিত বাহিরের ভাজাপোড়া খেয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিত আপনার বদহজম হবে। আপনি লাল মাংস বেশি খেলে বদহজমের সমস্যা বেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত চা কফি খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। কেননা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার আপনার হজম শক্তি দুর্বল করে দিতে পারে। তাহলে আপনি অবশ্যই বুঝতেই পারছেন আপনার শরীরের জন্য কোন খাবারটি ভালো আর কোন খাবারটি খারাপ।
শরীরের জন্য সবথেকে ভালো হলো আশ যুক্ত খাবার। আঁশযুক্ত খাবার খেলে পেট পরিষ্কার হয়। যাদের বদহজমের সমস্যা বেশি তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলে থাকেন আঁশ যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি,ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। শরীরের জন্য টক দই বেশ উপকারী। টক দই হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ফলের মধ্যে আপনি আপেল খেতে পারেন। আপেল আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে। এটি খেলে পায়খানা নরম হয় যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা রয়েছে তারা বেশি করে আপেল খেতে পারেন। এছাড়া আপনি কলা ডুমুর এসব খেতে পারেন। অবশ্যই  আপনাকে অ্যালকোহল সেবন বাদ দিতে হবে।

যেসব খাবার খেলে হজম শক্তি বাড়ে

বদহজম যার হয় সেই বুঝে এর কষ্ট কতটা। বদহজম হলে পেটে অস্বস্তি, পেট ফুলে যাওয়া সহজ নানা সমস্যা হয়। অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া দাওয়া করলে বদহজম হয়ে থাকে। যদি আপনার বদহজম হয়ে থাকে তাহলে আপনি বেশ কিছু খাবার খেতে পারেন তাহলে আপনার বদহজম আর হবে । আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজি রাখতে পারেন কেননা সবজি সহজে হজম হয়। সবজি হলো সহজ পাচ্য খাবার। এছাড়া আপনি আপনার খাদ্য তালিকাতে সালাদ রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন সালাতে যেন অতিরিক্ত মসলা না দেয়া হয় তাহলে আপনার বদহজম হতে পারে। আপনি সালাত খেতে পারেন অল্প মসলা দিয়ে মাকে কিন্তু অতিরিক্ত মসলা আপনার জন্য কাল হতে পারে। চিয়া সিড আপনি খেতে পারেন। চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়। অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন। আপনি যদি বদহজম এড়িয়ে চলতে চান তাহলে রাতের বেলায় আপনি চিয়াসিড ভিজিয়ে রেখে সকালে সেটি পান করুন। চিয়া সিড পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে।
পেট সবসময় ঠান্ডা রাখার একটি খাবার হল শসা। আপনি নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় শসা রাখতে পারেন। শসা খেলে আপনার পেট ঠান্ডা থাকবে আপনার হজম সমস্যা দূর হবে এবং হজমের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
আপনি আপনার খাবার তালিকায় লাউ রাখতে পারেন। মাছ-মাংস সবজি যাই খান না কেন পারলে লাউটা নিয়মিত রাখার চেষ্টা করবেন। লাউ খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া লাউ খুব সহজে হজম হয়। লাউ শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো পানি। সারা দিনে বেশি বেশি পানি পান করবেন। আপনি যত বেশি পানি পান করবেন আপনার হজম শক্তি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি আপনাকে খেতেই হবে। পানি আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

বাচ্চাদের বদহজম হলে করণীয়

সাধারণত বাচ্চাদের বদহজম হয় বেশি। কেননা বাচ্চাদের হজম শক্তি দুর্বল থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তাই খেতে দেওয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাচ্চাদেরকে চিপস আইসক্রিম চকলেট বেশি করে খেতে দেওয়া হয় কেননা বাচ্চারা এটি খেতে পছন্দ করে। তবে বাচ্চারা এগুলো পছন্দ করলেই তাদেরকে এগুলো খেতে দেওয়া ঠিক না। যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ হয়ে যায়।
বাচ্চাদের বদহজম হলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে আপেল মটরশুটি ও ইত্যাদি। বাচ্চা যদি এসব খেতে না চায় তাহলে লাল চালের ভাতের সাথে মসুর ডাল মিক্স করে খাওয়াতে পারেন এতে সে মুখে স্বাদ পাবে এবং ভালোভাবে খাবে। এছাড়া আপনি আপনার বাচ্চা তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন। পালং শাক সহজপাত্র খাবার এটি অতি সহজে হজম হয়। বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
এছাড়া আপনি আপনার বাচ্চাকে পুদিনার জুস করে খাওয়াতে পারেন এতে তার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আপনার বাচ্চা যদি দৌড়ঝাঁপ করতে চায় তাহলে কখনোই বাধা দিবেন না। বেশি বসে থাকলে হজমের গন্ডগোল দেখা দিবে তাই বাচ্চাকে দৌড়ঝাপ করতে দিন অথবা খেলতে দিন।
আপনার বাচ্চাকে অল্প অল্প করে ঘন ঘন পানি খাবার। পানি খেলে আপনার বাচ্চার বদ হজম তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে। আপনি যাই খাবার না কেন পানি বেশি করে খাওয়াবেন। কেননা পানি ছাড়া খাবার হজম হবে না।
আপনার বাচ্চা যদি এসব খাবার গুলো ঠিকমতো খেতে না চায় তাহলে আপনি ফল খাওয়াতে পারেন। সরাসরি যদি ফল খেতে না চায় তাহলে ফলের রস করে বাচ্চাকে খাওয়ান দেখবেন তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি আপেল কমলা নাশপাতির রস চিপে খাওয়াতে পারেন।

বাচ্চাদের যে সব খাবার খাওয়াবেন না 

বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। যদি আপনি চান আপনার বাচ্চা সুস্থ থাকুক আর বদ হজম না হোক তাহলে খাবারের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আপনার বাচ্চার খাবারের কখনোই অতিরিক্ত মসলা মেশাবেন না এতে তার পেটে সমস্যা করবে। বাচ্চাকে কখনোই বাহিরের ভাজাপোড়া খাওয়াবেন না এতে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে। আপনার বাচ্চাকে যদি অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাওয়ায় তাহলে তার হজমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে তাই মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য থেকে আপনার বাচ্চাকে দূরে রাখবেন।
অবশ্যই আপনার বাচ্চাকে চিপস জাতীয় কোন খাবার দিবেন না। এই চিপস জাতীয় খাবার আপনার বাচ্চার ক্ষুধা কমিয়ে দিবে পাশাপাশি হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দিবে। আপনার বাচ্চাকে সাদা আটার রুটি, সাদা চালের ভাত এগুলো দিবেন না। এগুলো হজমের সমস্যা সৃষ্টি করবে।
বাচ্চাকে পনির ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়াবেন না। এগুলো আপনার বাচ্চার হজম শক্তি নষ্ট করে দিবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টা হলো আজকাল বাচ্চারা বাহিরের ফাস্টফুড খেতে বেশি পছন্দ করে। এই ফাস্টফুড থেকে আপনার বাচ্চাকে সব সময় দূরে রাখবেন। খেতে দিলেও পরিমাণ মতো খেতে দিবেন অতিরিক্ত না।
বদহজম-থেকে-মুক্তির-উপায়

রোগ নির্ণয়

আপনার যদি বদহজমের সমস্যা না সাড়ে তাহলে ডাক্তার আপনার বেশ কিছু পরীক্ষা করবে। আপনার বদহজম কতদিন থেকে হচ্ছে কখন বেশি হয় এই সব কিছু ডাক্তার শুনবেন সেই অনুযায়ী পরীক্ষা দিবেন। আপনার ওজন কমে যাচ্ছে কিনা, খাবার রুচি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে কিনা এসব তিনি শুনবেন। আপনার যদি হঠাৎ করে বদহজমের সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসক কোন কিছু না ভেবে আপনাকে বেশ কিছু পরীক্ষা দিবেন এবং সেই পরীক্ষাগুলো আপনাকে অবশ্যই করাতে হবে।
  • প্রথমত চিকিৎসক আপনার মল পরীক্ষা করে দেখবেন যে বদহজম কেন হচ্ছে।
  • এরপরে তিনি এন্ডোসকপি করতে বলবেন। এন্ডোসকপি করলে পেটের ভিতরে যাবতীয় সমস্যা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়।
  • এছাড়া সিটি স্ক্যান দিবেন এতে অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়বে।
  • রক্ত পরীক্ষা করতে বলবেন।

বদহজম এর ঔষধ

ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি বদহজম না সাড়ে তাহলে আপনাকে ঔষধ খেতে হবে অথবা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আপনি চিকিৎসকের কাছে যেয়ে আপনার সমস্যা বললে সেই অনুযায়ী তিনি আপনার ওষুধ নির্ধারণ করে দিবে। অনেকে আছে পেটের সমস্যায় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান কিন্তু এটা ঠিক না আপনার যদি পেটের সমস্যা গুরুতর হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বদ হজমের ক্ষেত্রে মেগালড্রেড ভালো কাজ দেয়। বড় বড় চিকিৎসকরা ও বদহজমের সমস্যায় এ ওষুধটি রোগীদেরকে দিয়ে থাকে। এই ওষুধটি গ্যাস্ট্রিক এসিডকে প্রশমিত করে। পেপসিন এর কার্যকারিতা কেও এটি কমিয়ে দেয়।

বদহজমের সবথেকে ভালো ঔষধ

বদ হজম একটি কমন সমস্যা। কম বেশি সবারই বদহজম হয়ে থাকে। তবে বদহজম হবার পেছনে আপনি নিজেই দায়ী। আপনি যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনার বদহজম হবে। আর বদহজম হয়ে গেলে এই সমস্যা সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। বদহজম হলে ঢেক উঠে পেট ফুলে যায় পেটে অস্বস্তি ভাব দেখা যায়। ঘরোয়া উপায়ে সমস্যা না কাটলে অবশ্যই আপনাকে ঔষধ খেতে হবে। বদ হজমের সব থেকে ভালো ওষুধ এবং চিকিৎসকের প্রথম পছন্দ হলো এন্টাসিড। এন্টাসিড আপনার পেটের অস্বস্তি ভাব কমাবে, আপনার গ্যাসকে প্রশমিত করবে। তাই আপনি যে ডাক্তারের কাছে যান না কেন অন্যান্য ঔষধের সাথে আপনাকে এন্টাসিড দিবে।

লেখকের মন্তব্য

আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। বদহজমের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা আপনারা উপরের আর্টিকেলটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। একথা সত্যি যে বদহজম এমন একটি সমস্যা যদি কাউকে একবার আঁকড়ে ধরে তাহলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা একটু কঠিন হয়ে যায় তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে। আশা করি আমার আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সবার সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্কয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url