অতিরিক্ত ঘামের কারন
অতিরিক্ত ঘামের কারন
অতিরিক্ত ঘামাকে হাইপারহাইড্রোসিস বলে।এটি সাধারন মনে হলেও অনেকের কাছে কস্টদায়ক বিষয়।হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির অপ্রয়োজনে ঘাম হয় আর অতিরিক্ত ঘাম হয়।অতিরিক্ত ঘামের কারন গুলো জেনে নিই আসুনঃ
পোস্ট সূচিপত্র
অত্যধিক ঘামের কারন
ঘাম একটি শরীরের প্রক্রিয়া।তবে চিন্তার কারন তখনই যখন ঘাম হয় অতিরিক্ত।বিভিন্ন কারনে ঘাম হতে পারে।ডায়বেটিস,অতিরিক্ত ওজন,বিভিন্ন ওষুধ এসব কারনেও ঘাম বাড়তে পারে।
আবার অনেক সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে,অতিরিক্ত গরম খাবার খেলে বিশেষ করে গরুর মাংস,হাসের মাংস,চা-কফি এসব খেলেই ঘাম বেড়ে যেতে পারে।অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার খেলে এই রোগ বেড়ে যেতে পারে।টেনশন,ভয় থেকেও ঘামের সমস্যা বাড়তে পারে।অনেক সময় মাথা ব্যথা,বুকে চাপ ধরলে ঘাম বাড়ে।
আবার গরম আবহাওয়া ছাড়া বা গরম কিছু খাওয়া ছাড়া যদি ঘাম হয় তাহলে অবশ্যই তা চিন্তার বিষয়।সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।আপন যদি দেখেন যে ঘাম আপনার স্বাভাবিক জীবন কে বাধা দিচ্ছে সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।ওষুধ খেতে হবে।
অতিরিক্ত ঘামের লক্ষনগুলো
১।স্কিনের অতিরিক্ত শুষ্কতা অতিরিক্ত ঘামের লক্ষন এর মধ্যে অন্যতম।গরমের সময় স্কিন অতিরিক্ত শুস্ক হয়ে গেলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত ঘামের শিকার হবেন আপনি।
২।ত্বকে অতিরিক্ত জ্বালা হলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত ঘামের রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন।
৩।সবসময় ক্লান্তি লাগলে এই রোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি।
৪।যাদের হাতের তালু সব সময় ঘামে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫।হাইপারথ্যালামাইসিস ত্রুটির কারনেও এই রোগ হয়।
আরও পড়ুনঃকিডনি ভাল রাখার উপায়
অতিরিক্ত ঘামের কারনে যেসব সমস্যা হয়
অতিরিক্ত ঘামের কারনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।যেমন হাতের তালু সব সময় ঘেমে থাকে বলে যেকোন কাজ করতে সমস্যা হয়।
ঘামের কারনে শরীর থেকে গন্ধ বের হয়।যার ফলে লজ্জার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
অতিরিক্ত ঘামের কারনে একজন মানুষ কোথাও যেতে পারে না।
কারও সাথে কোলাকুলি করতে পারে না।ফলে পড়তে হয় অনেক সমস্যায়।চাকুরিজীবী,ব্যবসায়ী যারা বেশি ঘামা রোগে আক্রান্ত তারা চাইলেও সেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন না।বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের দিন পার করতে হয়।
রোগ নির্ণয়
একজন মানুষ এর যদি সন্দেহ হয় যে তার হাইপারহাইড্রোসিস আছে তাহলে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে পারে।চিকিৎসক রোগের কারন ,পারিবারিক ইতিহাস এসব বের করে চিকিৎসা শুরু করবেন।এক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে থাকেন ডাক্তার।ডাক্তার ঘামের পরিমান দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন।আক্রান্ত ব্যক্তি কি পরিমানে ঘামছেন তা বের করবেন।ত্বকে জ্বালা হয় কিনা তা দেখবেন।
তারপর রোগী কি পরিমানে ঘামে সেইটা পরীক্ষা করে দেখবেন।
অনেক সময় ডায়বেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েড সমস্যার জন্য ঘাম হতে পারে।
যদি তাই হয় তাহলে ডাক্তার আগে ডায়বেটিস পরীক্ষা দিবেন।কেননা ডায়বেটিস এর রোগীরা ঘামেন বেশি।
উচ্চ রক্তচাপ ঘাম বাড়ানোর অন্যতম কারন।ডাক্তার প্রেসার মেপে দেখবেন যে রক্তচাপ বেশি আছে কিনা যদি থাকে তাহলে এর ওষুধ দিবেন।
থাইরয়েড অতিরিক্ত ঘামে অবদান রাখে।বেশির ভাগ ডাক্তার এই পরীক্ষা দিয়ে থাকে।তাই ডাক্তার থাইরয়েড পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ দেখবেন।
আবার হরমোন পরীক্ষা ডাক্তার দিয়ে থাকেন।কেননা হরমোন টেস্ট করলে ঘামের আসল কারন ধরা পড়ে।
চিকিৎসা
হাইপারহাইড্রোসিস এর সুচিকিৎসা রয়েছে।এই রোগের ক্ষেত্রে জীবন যাত্রার পরিবর্তন আনতে হয়।আবার যাদের থাইরয়েডের সমস্যা তাদের ওষুধ খেতে হয়।উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রন করতে ওষুধ খেতে হবে।উচ্চ রক্তচাপ অনেক ঘাম বাড়ায় যা ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রন করতে ডাক্তার ওষুধ বা বোটুনিলাম টক্সিন ইঞ্জেকশন দিতে পারেন।ইঞ্জেকশনটি স্নায়ুগুলোকে ব্লক করে যা ঘামকে আস্তে আস্তে হ্রাস করে।
অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচার করা হয়।যেমন ঘাম গ্রন্থি অপসারন।এটি সাধারনত শেষ চিকিতসা হিসেবে ধরা হয়।
যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
আপনি যখন দেখবেন অতিরিক্ত ঘামছেন তখন ডাক্তারের কাছে যাবেন।আবার ঘাম যদি আপনার জীবনকে ব্যাহত করে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
আবার হুট করে ঘামা শুরু করলে ডাক্তার দেখাতে হবে।এটা ভাল লক্ষন নয়।
অনেক সময় কোন ওষুধ গ্রহনের পর ঘাম হতে পারে।সেইক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ঘাম যদি টানা ৬ মাসের বেশি চলতে থাকে সেইক্ষেত্রে আর দেরি করা যাবেনা।আপনাকে দ্রুত যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
রাতের বেলায় আকস্মিক ঘামতে শুরু করলে,আবার ঘামের সাথে যদি জ্বর আসে তাও যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
তাই বলা যায়, সময় থাকতে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে।অতিরিক্ত ঘাম সাধারন কোন রোগ নয়।হতে পারে স্টোক এর লক্ষন।অনেক সময় স্ট্রোক এর কয়েকদিন আগ থেকে শরীর ঘামতে শুরু করে।যা অনেকেই গুরুত্ব দেয়না।অনেক সময় অস্ত্রপ্রচার করেও অসুখটি সারেনা।এই সব রুগীর উচিত পাতলা কাপড় পড়া,অধিক মসলা জাতীয় খাবার না খাওয়া,মদ পান না করা,অতিরিক্ত গরম খাবার না খাওয়া।
সচেতন থাকতে হবে গরুর মাংসের ক্ষেত্রে।এতে প্রচুর কোলেস্ট্রল আছে যা আপনার ঘামকে বাড়িয়ে দিতে পারে।ফলে আপনার শরীর অতিরিক্ত ঘামতে শুরু করবে।অতএব আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
স্কয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url